সত্যিই কি শিব গাঁজাখোর?
সত্যিই কি শিব গাঁজাখোর?
সত্যিই কি শিব গাঁজাখোর?
★★★★★★★★★★★★★★
হিন্দু ধর্মে শিবের উপস্থিতি এতটাই প্রকট যে, এই দেবকল্পকে বাদ দিয়ে এই ধর্মকে চিন্তাই করা যায় না। শিব শাস্ত্রীয় নিরিখে আদি চৈতন্য। তিনি অনাদি ও অনন্ত। তাঁর সৃষ্টি বা বিলয় নেই। কিন্তু গণচেতনায় শিব এক আশ্চর্য চরিত্র। তিনি আধবুড়ো, গাঁজাখোর, শ্মশানবিহারী এবং দোজবরে। এ থেকে বিস্ময় জাগতেই পারে, দেবাদিদেব হিসেবে যিনি শাস্ত্র-স্বীকৃত, গণচাতন্যে তাঁর এমন অবনমন হয় কী করে!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বৈদিক ও পরবর্তী কোনও শাস্ত্রেই শিবের এই ‘নেশাখোর’ চরিত্র উল্লিখিত নেই। পুরাণেও শিবকে এমন আলোয় দেখা হয়নি। সেদিক থেকে দেখলে, শিবের এই চিত্রণ একান্ত ভাবেই মানবিক কল্পনাপ্রসূত।
এখন জিজ্ঞাসা— এত দেবতা থাকতে শিবকে ঘিরেই বা কেন এমন কল্পনা গড়ে উঠল?
এর উত্তর খুঁজতে গেলে প্রবেশ কগরতে হবে শৈব দর্শনে। শৈব শাস্ত্র অনুযায়ী, শিব যাবতীয় মায়ার ঊর্ধ্বে। তিনি পরাজ্ঞান। তাঁকে জানতে পারলেই বিশ্বরহস্যের অবসান ঘটে। সেদিক থেকে দেখলে মায়াকে শিবের পায়ে সমর্পণ করাই বিধেয়। যুগ যুগ ধরে ভারতীয় সংস্কৃতি মায়াকে নেশারই রূপভেদ বলে গণ্য করেছে। মায়ার পর্দা ভেদ করেই সত্য প্রকট হয় বলে মনে করেছে। সেক্ষেত্রে গাঁজা বা অন্য নেশার বস্তু মায়ার প্রতীক হিসেবেই প্রতিভাত। এই বস্তু দেবাদিদেবকে সমর্পণ করে মায়ার নাগপাশ মুক্ত হতে চায় মানুষ। এখান থেকেই শিবকে গাঁজা বা সিদ্ধি নৈবেদ্য প্রদানের পরম্পরা তৈরি হয় বলে সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্বের গবেষকরা মনে করেন।
অঘোরপন্থী যোগীরা গাঁজা বা ভাংকে তাঁদের সাধনার অঙ্গ হিসেবে দেখেন। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র এই সব গাছড়াকে ওযুধ হিসেবে অসংখ্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করে। যোগীরা এই সব বস্তুকে তাঁদের মনঃসংযোগ ও ধ্যানের সহায়ক হিসেবে দেখেন।
বাংলার লোকায়ত চিন্তায় মহাদেব এক প্রৌঢ় গৃহস্থ। তিনি অভাবী, দ্বিতীয় বিবাহের ভারে নুয়ে পড়া। কবি রামেশ্বর তাঁর ‘শিবায়ন’ কাব্যে শিবকে এমন চরিত্রেই এঁকেছেন। এই ছবি বাংলার অন্তর থেকে উঠে আসা। তিনি সংসার-বিমুখ। শ্মশান আর গাঁজা-ভাং তাঁর বৈরাগ্যের প্রতীক হিসেবেই উঠে আসে এই চিরায়ত কাব্যে। বাঙালি শিবকে এভাবেই ভাবতে চেয়েছে। এই শিব বাঙালির একান্ত ভালবাসার ধন। তিনি গাঁজা খেলেও প্রণম্য, না খেলেও প্রণম্য।
।।সংগৃহিত।।
সত্যিই কি শিব গাঁজাখোর?
★★★★★★★★★★★★★★
হিন্দু ধর্মে শিবের উপস্থিতি এতটাই প্রকট যে, এই দেবকল্পকে বাদ দিয়ে এই ধর্মকে চিন্তাই করা যায় না। শিব শাস্ত্রীয় নিরিখে আদি চৈতন্য। তিনি অনাদি ও অনন্ত। তাঁর সৃষ্টি বা বিলয় নেই। কিন্তু গণচেতনায় শিব এক আশ্চর্য চরিত্র। তিনি আধবুড়ো, গাঁজাখোর, শ্মশানবিহারী এবং দোজবরে। এ থেকে বিস্ময় জাগতেই পারে, দেবাদিদেব হিসেবে যিনি শাস্ত্র-স্বীকৃত, গণচাতন্যে তাঁর এমন অবনমন হয় কী করে!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বৈদিক ও পরবর্তী কোনও শাস্ত্রেই শিবের এই ‘নেশাখোর’ চরিত্র উল্লিখিত নেই। পুরাণেও শিবকে এমন আলোয় দেখা হয়নি। সেদিক থেকে দেখলে, শিবের এই চিত্রণ একান্ত ভাবেই মানবিক কল্পনাপ্রসূত।
এখন জিজ্ঞাসা— এত দেবতা থাকতে শিবকে ঘিরেই বা কেন এমন কল্পনা গড়ে উঠল?
এর উত্তর খুঁজতে গেলে প্রবেশ কগরতে হবে শৈব দর্শনে। শৈব শাস্ত্র অনুযায়ী, শিব যাবতীয় মায়ার ঊর্ধ্বে। তিনি পরাজ্ঞান। তাঁকে জানতে পারলেই বিশ্বরহস্যের অবসান ঘটে। সেদিক থেকে দেখলে মায়াকে শিবের পায়ে সমর্পণ করাই বিধেয়। যুগ যুগ ধরে ভারতীয় সংস্কৃতি মায়াকে নেশারই রূপভেদ বলে গণ্য করেছে। মায়ার পর্দা ভেদ করেই সত্য প্রকট হয় বলে মনে করেছে। সেক্ষেত্রে গাঁজা বা অন্য নেশার বস্তু মায়ার প্রতীক হিসেবেই প্রতিভাত। এই বস্তু দেবাদিদেবকে সমর্পণ করে মায়ার নাগপাশ মুক্ত হতে চায় মানুষ। এখান থেকেই শিবকে গাঁজা বা সিদ্ধি নৈবেদ্য প্রদানের পরম্পরা তৈরি হয় বলে সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্বের গবেষকরা মনে করেন।
অঘোরপন্থী যোগীরা গাঁজা বা ভাংকে তাঁদের সাধনার অঙ্গ হিসেবে দেখেন। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র এই সব গাছড়াকে ওযুধ হিসেবে অসংখ্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করে। যোগীরা এই সব বস্তুকে তাঁদের মনঃসংযোগ ও ধ্যানের সহায়ক হিসেবে দেখেন।
বাংলার লোকায়ত চিন্তায় মহাদেব এক প্রৌঢ় গৃহস্থ। তিনি অভাবী, দ্বিতীয় বিবাহের ভারে নুয়ে পড়া। কবি রামেশ্বর তাঁর ‘শিবায়ন’ কাব্যে শিবকে এমন চরিত্রেই এঁকেছেন। এই ছবি বাংলার অন্তর থেকে উঠে আসা। তিনি সংসার-বিমুখ। শ্মশান আর গাঁজা-ভাং তাঁর বৈরাগ্যের প্রতীক হিসেবেই উঠে আসে এই চিরায়ত কাব্যে। বাঙালি শিবকে এভাবেই ভাবতে চেয়েছে। এই শিব বাঙালির একান্ত ভালবাসার ধন। তিনি গাঁজা খেলেও প্রণম্য, না খেলেও প্রণম্য।
।।সংগৃহিত।।
No comments