একোদন্ত

সেইমতো তপস্যায় বসলেন বেদব্যাস | সন্তুষ্ট হয়ে আবির্ভূত হলেন মহাজ্ঞানী গণেশ | বেদব্যাসকে সাহায্য করতে সম্মত হলেন তিনি | কিন্তু শর্ত রাখলেন‚ বেদব্যাস এক লহমার জন্যও থামতে পারবেন না | থামলেই গণেশ বন্ধ করবেন রচনা |
বিপদ বুঝে পাল্টা শর্ত রাখলেন বেদব্যাসও | বললেন‚ তিনি থামবেন না | কিন্তু গণেশকেও সব শ্লোক বুঝে লিখতে হবে | আগে বুঝতে হবে | তারপর লিখতে হবে | তাতে সম্মত হলেন গণপতি |
এরপর শুরু হল মহাভারত লেখা | বেদব্যাস ইচ্ছে করে জটিল শ্লোক রচনা করে বলতে লাগলেন | বুঝতে সময় নিলেন গণেশ | এতে বেদব্যাস সময় পেয়ে গেলেন পরবর্তী শ্লোক রচনার |
এইভাবে একদিকে ব্যাস বলে চলেন | পার্বতী-পুত্র লিখে চলেন | লিখতে লিখতে পালকের কলম গেল ভেঙে | এ বার উপায় ? থামলে তো চলবে না | তাই গণেশ নিজের একটি দাঁত ভেঙে নিলেন | সেটাই হল মহাভারত লেখার কলম | যতই লেখো না কেন‚ গজদন্ত তো আর ভাঙবে না !
এভাবে লম্বোদরের দাঁত দিয়ে লেখা হল পৃথিবীর বৃহত্তম মহাকাব্য | মহাভারতে আছে হাজারের বেশি শ্লোক | শব্দসংখ্যা ১.৮ মিলিয়নেরও বেশি | ভারতীয় পুরাণে এই আখ্যান আত্মত্যাগের এক নজির |
গণেশের দাঁত ভাঙা নিয়ে আছে আরও তত্ত্ব | তার সঙ্গেও জড়িত আত্মত্যাগ | কথিত‚ শিবের বরে বলীয়ান হয়ে পরশুরাম ক্ষত্রিয় নিধন করেন | শিবকে কৃতজ্ঞতা জানাতে কৈলাস পর্বতে যান
কিন্তু সেখানে ঢুকতে বাধা পান পরশুরাম | পাহারারত গণেশ জানান‚ শিব তখন নিদ্রামগ্ন | পরশুরামকে পরে আসতে হবে | এতে কুপিত পরশুরাম গণেশকে আক্রমণ করেন | গণেশও সমানে সমানে লড়াই করতে থাকেন | কিন্তু শেষ অবধি পরশুরাম প্রয়োগ করেন নিজের কুঠার | কোনও বাধা দেননি গণেশ | কারণ‚ কুঠারটি দিয়েছিলেন স্বয়ং মহাদেব | বিনা প্রত্যাঘাতে কুঠারাঘাতে ভেঙে পড়ল গণেশের একটি দাঁত | এখানেও আত্মত্যাগ | বাবার সম্মান ক্ষুণ্ণ না করতে প্রত্যাঘাতে বিরত থাকেন গণেশ | কার্যত উৎসর্গ করেন নিজের অঙ্গ | সেই থেকে গণেশের নাম একোদন্ত
No comments