যম মহারাজ এর বিষয়ে আলোচনা
অনেক বিষয়ে তো আলোচনা হইলো
এবার যম মহারাজ এর বিষয়ে আলোচনা করবো আসুন সবাই মিলে জেনে নেই।
_____________________________________________
মৃত্যু ভয়ে যমরাজার পূজা করা হয়ে থাকে!
হিন্দু শাস্ত্রে মৃত্যুর দেবতা যমরাজ,
দক্ষিণ ভারতে তাঁকে লোকপাল'ও বলা হয়ে
থাকে। পুরাণ মতে এই পৃথিবীতে তাঁরই প্রথম মৃত্যু
হয়।
তারপর শিবের আশির্বাদে তিনি মৃত্যুর দেবতা
হিসেবে উন্নীত হন হিন্দু শাস্ত্রে বিশ্বাস করা হয়
যে মৃত্যুর ঠিক আগে যমদূতেরা পৃথিবীকে বিদায়
জানানোর মুখে দাঁড়িয়ে থাকা আত্মাকে নিতে
আসে।
তারপর জীবদ্দশায় তাঁর কর্মফল অনুসারে তাঁকে
স্বর্গ বা নরকে নিক্ষেপ করেন স্বয়ং যমরাজ।
কিন্তু তার আগে যমরাজ প্রত্যেককে চারটে
করে চিঠি পাঠান এই চার চিঠি তাঁর পৃথিবী ছাড়া প্রস্তুতির
বার্তা হিসেবে পাঠানো হয়। কিন্তু আমরা বেশিরভাগই
এই চার চিঠিকে চিনতে পারি না এ বিষয়ে হিন্দুশাস্ত্রে
একটি গল্প আছে যে গল্পের প্রধান চরিত্র যমরাজ
ও তাঁর এক ভক্ত অমৃত।
পুরাকালে যমুনা নদীর তীরে অমৃত বলে এক
ব্যক্তি থাকতেন। তিনি মৃত্যুকে অত্যন্ত ভয়
পেতেন।
মৃত্যুর দেবতাকে প্রসন্ন করতে প্রতিদিন
ভক্তিভরে যমরাজের পুজো করতেন তিনি
ভেবেছিলেন এ ভাবে মৃত্যুকে ঠেকিয়ে রাখা
যাবে তাঁর ভক্তিতে খুশি হয়ে একদিন অমৃতকে
দর্শন দেন যমরাজ তিনি অমৃতকে বলেন আমি
তোমার উপাসনার উদ্দেশ্য জানি।
কিন্তু মৃত্যুকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয় যার জন্ম
হয়েছে, তার মৃত্যু হবেই এটাই প্রকৃতির নিয়ম তবু
তোমার ভক্তিতে খুশি হয়ে আমি নিয়ম ভেঙে
তোমায় দর্শন দিয়েছি। আমার দর্শন শুধু মৃত মানুষরাই
পেয়ে থাকেন। মৃত্যু অবধারিত জেনে অমৃত
যমের কাছে মৃত্যু সম্পর্কে আগাম বার্তা চান তিনি
বলেন মৃত্যুর আগে যমরাজ যেন তাঁকে চিঠি দিয়ে
জানান। তথাস্তু বলে যমরাজ জানান যে এর পরিবর্তে
সেই বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি যেন মৃত্যুর
জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা শুরু করেন।
বেশ কয়েক বছর কেটে গেল যমরাজের চিঠি
আসেনি, এই ভেবে ভোগ-কামের জীবনে
নিজেকে ডুবিয়ে দেন অমৃত তাঁর চুল পাকতে শুরু
করল কিন্তু যমের চিঠি তো আসেনি। নিজের
পঙ্কিল জীবনে নিমজ্জিত রইলেন তিনি আরও
কয়েক বছর পর তাঁর সব দাঁতও পড়ে গেল।
তবু যমের চিঠি পেলেন না তিনি জীবন চলল একই
ভাবে। এরপর একদিন দৃষ্টিশক্তি হারালেন অমৃত তবু
যমের চিঠি না পাওয়ার আনন্দে মশগুল তিনি একসময়
চলাফেরার ক্ষমতাও হারালেন তারপর একদিন দেখেন
যমদূতেরা তাঁকে নিতে এসেছে এ কী কাণ্ড।
চিঠি না পাঠিয়েই তাঁর মৃত্যুর দিন কী করে স্থির
করলেন যমরাজ--যমরাজের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের অভিযোগ করলেন অমৃত।
যমরাজ উত্তরে জানালেন পার্থিব আনন্দের মোহ
তোমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল তাই আমার পাঠানো
বার্তা তোমার চোখে পড়েনি তোমার মনে
নেই।
বহু বছর আগে তোমার চুল পেকে যায় সেই
আমার পাঠানো প্রথম চিঠি যে অমৃত প্রস্তুত হও
এরপর তোমার দাঁত পড়ে সেটি আমার দ্বিতীয় চিঠি
এরপর তোমার দৃষ্টিশক্তি চলে যায় তা হল আমার
পাঠানো তৃতীয় চিঠি। তখনও তুমি প্রস্তুত হলে না
এরপর তোমার চলাফেরা করার ক্ষমতাও চলে যায়
আমার সেই চিঠিও তোমার চোখে পড়ল না।
যমরাজের এই চার চিঠি আমরা সবাই পাই।
কিন্তু অমৃতের মতোই তা আমাদের চোখে
পড়ে না। নিজের মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত হয়ে
আমাদের উচিত এই পার্থিব জগতের সঙ্গে ধীরে
ধীরে সম্পর্ক ছেদ করে নিজের
আধ্যাতিকতাকে তুলে ধরা।
তাই সময় থাকতে আমরা সবাই হরিকীর্তন, শ্রবন ও হরির নাম প্রচার করি।
No comments